বিশ্ব বার্তা




দিনে ভিক্ষা রাতে তিনকোটি টাকার বাসায় বসবাস
বিশ্ব বার্তা: যথেষ্ট স্বচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও ভিক্ষা করায় এক পেশাদার ভিক্ষুককে জেলে পাঠিয়েছে বৃটেনের আদালত
৩৭ বছর বয়স্ক এই ভিক্ষুকের নাম সিমন রাইটমানুষের কাছে হাত পেতেই সে বছরে প্রায় ৫o হাজার পাউন্ড (প্রায় ৫৮ লাখ টাকা) আয় করে! তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সারাদিন ভিক্ষা করে সে যে বাড়িতে ঘুমাতে যায় তার দাম তিন লাখ পাউন্ড (তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা)! খবর ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাইট পুটনে হাই স্ট্রিটে ছেঁড়া জামা পরে বসে আছেনতার হাতের সাইনবোর্ডে লেখা: হোমলেস অ্যান্ড হাংরি (গৃহহীন এবং ক্ষুধার্ত)
এভাবে বসে থেকেই তিনি পথচারীদের কাছ থেকে দিনে প্রায় ২০০ পাউন্ডের সমপরিমাণ উপহার সামগ্রী পেতআর সেগুলো নিয়েই তিনি রাতে তিন লাখ পাউন্ডের বাড়িতে ফিরে যেতেন
ওয়েস্টমিনস্টার সিটি কাউন্সিলের প্রহরীরা রাইটকে লেইসেস্টার স্কয়ারে ভিক্ষা করতে দেখে এবং সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেয়পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে
সেটা গত মাসের কথাতখনই ম্যাজিস্ট্রেটরা লন্ডনের রাস্তায় ভিক্ষা করার বিষয়ে রাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেকিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাকে আবার ভিক্ষা করতে দেখা গেছেএ কারণেই তার ঠিকানা হয়েছে শ্রীঘরে
এ বিষয়ে কাউন্সিলর নিকি অ্যাইকেন বলেন, এটা চরম ধৃষ্টতাআর এ ধরনের লোককে ধরার জন্যই আমাদের প্রহরী আছেতার মতো অনেকেই ভিক্ষা করেন, যারা আসলে গরীব নন
আমরা মানুষকে অনুরোধ করব যেন রাস্তার ভিক্ষুককে তারা সরাসরি টাকা না দেনযদি সত্যিই কেউ দান করতে চান তবে সেটা গৃহহীন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে করা যেতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের জীবন নতুন করে সাজানোর কাজ করে

মধ্যপ্রাচ্যে রোজা শুরু বুধবার
বিশ্ব বার্তা :সোমবার মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে চাঁদ দেখা যায়নি
সাবান মাস ৩০দিন পূর্ণ হওয়ায় আগামী বুধবার থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পবিত্র রোজা শুরু হচ্ছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় আদালত এ খবর নিশ্চিত করে
সোমবার সৌদি আরবের একটি উচ্চ পর্যায়ের চাঁদ দেখা কমিটির তথ্য অনুযায়ী আদালত এ ঘোষণা দেন বলে জানা গেছে সোমবার সৌদি আরবের আকাশ বালির কারণে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল বলেও চাঁদ দেখা কমিটি আদালতকে জানায়
সৌদি আরবের সময় অনুযায়ী কুয়েত, কাতার, বাহারাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানেও বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস


আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন : প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উত্খাতে অর্থ দেয় ওবামা প্রশাসন

 বিশ্ব বার্তা: মিসরে সেনা অভ্যুত্থানে দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র্র কারও পক্ষ নেয়নিতবে মার্কিন সরকারের বেশ কিছু নথিপত্রে দেখা গেছে, মিসরে মুরসিকে উত্খাতে জড়িত প্রধান বিরোধী জোটসহ বেশি কিছু রাজনীতিককেও বিপুল অর্থ সহায়তা দেয় ওবামা প্রশাসন
নথিপত্রে দেখা যায়, যেসব কর্মকর্তাকে অর্থ সহায়তা করা হয় তার মধ্যে আছেন একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তা যিনি সহিংস উপায়ে মুরসি সরকারকে উত্খাতে প্ররোচনা দেনআর একজন ইসলামবিরোধী রাজনীতিককেও অর্থ দেয়া হয়, যিনি প্রচারণা চালান যে মসজিদগুলো বন্ধ করে দিয়ে আলেমদের জোর করে বের করে দিতে হবেযুক্তরাষ্ট্র্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনভিত্তিক অনুষ্ঠান ইউসি বারকেলের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের উন্নয়নে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্টতহবিলের অধীনে এ অর্থসহায়তা দেয়া হয়ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের অধীনে প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষাত্কার এবং সরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ অর্থসহায়তা পেয়ে আসছে মুরসিবিরোধী রাজনীতিক ও তাদের অনুগতরা
ওয়াশিংটনের এ অর্থ সহায়তা মিসরীয় আইনের লঙ্ঘনমিসরের আইনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিদেশি অর্থসহায়তা নেয়া নিষিদ্ধএমনকি এটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনেরও লঙ্ঘনদেশটির আইন অনুসারে বিদেশি রাজনীতিক, নাশতকামূলক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচিত সরকার বিরোধী কোনো কাজে জনগণের করের টাকা খরচ করা যায় না
মূলত আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থীদের উত্থান ঠেকাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষদের ফের ক্ষমতায় আনার জন্য ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্স তহবিলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এ অর্থ সহায়তা দেয়
ইসলামপন্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনি স্বার্থের বিরোধিতা করে থাকে
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজনীতিক বলেছেন, ওয়াশিংটন পরোক্ষাভাবে বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিয়েছে
মুরসি বিরোধী মিসরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান রাজনীতিক স্বাধীন ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের আমেরিকানরা বলেছে আমরা যদি সপ্তাহখানেক ধরে বড় ধরনের বিক্ষোভ করতে পারি তবে ওয়াশিংটন মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার সম্পর্কে তার বিদ্যমান নীতি পুনর্বিবেচনা করবে
যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রায়ণের জন্য যত অর্থ খরচ করেছে তার একটি বড় অংশ পেয়েছে কায়রোতে অবস্থিত ইব্রাহিমের ইবনে খালদুন সেন্টারমিসরের অন্যান্য রাজনীতিকরাও বলেছেন যে মুরসির বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনকে প্রকাশ্যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে জনমতকে ক্ষেপিয়ে তুলতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থসাহায্যপুষ্ট মিসরের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রেই নির্বাসিত, ওমর আফিফি সোলিমান একটি পরিকল্পনার কথা লিখেছেন এভাবে—‘রাস্তায় খেজুর গাছ ফেলে কায়রোমুখী বাসগুলো থামিয়ে দাও, রাস্তা ভিজিয়ে দাও গ্যাস আর ডিজেল দিয়েএ অবস্থায় বাসের গতি যখন কমে আসবে তখন আগুন জ্বালিয়ে দাও যাতে ভেতরের সব যাত্রী পুড়ে মারা যায়
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় একাধিক সংস্থার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থ সহায়তা করে থাকেজনগণের করের কোটি কোটি ডলার সরবরাহ করা হয় ব্যুরো অব ডেমোক্র্যাসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার, দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ, ইউএসএইড এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির মাধ্যমে
এসব সংগঠন আবার অন্য সংগঠনের মাধ্যমে মুরসিবিরোধী নেতাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছেএর মধ্যে আছে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট এবং ফ্রিডম হাউসযুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের নথিপত্রে দেখা যায়, বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওর নামে এসব সংগঠন মিসরে মুরসিবিরোধী অনেক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে
১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর বুশ প্রশাসন ২০০২ সালে দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ গড়ে তোলেএ সংগঠনটি মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের নামে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ কোটি ডলার খরচ করেছেইউএসএইড মধ্যপ্রাচ্যে বছরে খরচ করে ১৪০ কোটি ডলারএর মধ্যে গণতন্ত্রায়ণেরজন্য খরচ করা হয় ৩৯ কোটি ডলার
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরাসরি গণতন্ত্র প্রকল্পের জন্য কত অর্থ ব্যয় করে তার হিসাব প্রকাশ করে নাতবে ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রজেক্ট অন মিডল ইস্ট ডেমোক্র্যাসির নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন ম্যাকইনিমির হিসেবে, ২০১১ সালের এজন্য সাড়ে ৬ কোটি ডলার এবং ২০১২ সালে আড়াই কোটি ডলার ব্যয় করা হয়েছে
মিসরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থ সহায়তার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসি২০১১ সালের সংস্থাটির জন্য কংগ্রেসের বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারসংস্থাটি কর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের মিসরের একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তাকে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার অর্থ দিয়েছেতার কাজ হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে মিসরে সহিংসতায় উসকানি দেয়া
কর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের এই পুলিশ কর্মকর্তা মিসরের এলিট পুলিশি তদন্ত বাহিনীতে কর্মরত ছিলেনএ বাহিনীটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত ২০০৮ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছেনহোসনি মোবারক সরকার, তার বিদায়ের পর সেনা সরকার এবং সর্বশেষ মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছে সোলিমান
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ধার মর্যাদা পেয়েছেনতার অনুপস্থিতিতে তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে কায়রোর একটি আদালততাকে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির ফেলোশিপ দেয়া হয়েছেএর আওতায় তাকে ২০০৯ সালে ৫০ হাজার ডলার এবং ২০১০ সালে ৬০ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে
ইউসি বারকেলের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে তিনি অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেনতবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অর্থ যথেষ্ট নয়এদিকে, এনইডি তার ওয়েবসাইট থেকে মিসরে অর্থ সহায়তার হিসাব তুলে নিয়েছে
ফেসবুকের ৮৩ হাজার অনুসারী, ইউটিউব ও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি ব্রাদারহুড ও মুরসিবিরোধীদের ভয়ঙ্কর সহিংসতার পথ বাতলে দিতেনজুনে মুরসি বিরোধী আন্দোলনের সময় তার একটি নির্দেশনা ছিল এরকমপ্রথমেই হাঁটুর হাড় গুঁড়ো করে দিয়ে মুরসি সমর্থকদের অক্ষম করে দাও
পরে সেভাবেই মুরসি সমর্থকদের ওপর হামলা হয়মে মাসে সে তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষের প্রধানদের শিরশ্ছেদ করে
মিসরের মুরসিবিরোধী অনেক নেতাকেও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়এরা গায়ের জোরে মুরসিকে উত্খাতের পক্ষে প্রচারণা চালায়এদের মধ্যে মুরসিবিরোধী প্রধান জোট সালভেশন ফ্রন্টের নেতারাও রয়েছেএ জোটের প্রধান বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট নোবেলজয়ী আল বারাদেই
এদেরই একজন হলেন মুসলিমবিরোধী নেত্রী এরশা আবদেল ফাতাহতিনি জোর প্রচারণা চালান, মুরসি প্রবর্তিত সংবিধানের পক্ষে, যেখানে বলা হয়েছিল শরীয়াহ হবে মিসরের সংবিধানের উত্স, যেসব মসজিদ থেকে প্রচারণা চালানো হয়, সেসব মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে তার ইমামদের বের করে দিতে হবেসত্যি সত্যিই তার সমর্থকরা এই কাজ করে বসেএতে বাধা দেয়া হলে বেশ কয়েকজন মুরসি সমর্থককে হত্যা করা হয়
আবদেল ফাতাহর এনজিও দ্য ইজিপশিয়ান অ্যাকাডেমিকে ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৭৫ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়আবদেল ফাতাহ সালভেশন ফ্রন্টেরও নেত্রীএ দলের প্রধান এল বারাদিই কিছুদিন আগেই ঘোষণা করেন, ৩০ জুন হবে মুরসির শেষ দিনতার তিন দিন পর মুরসিকে উত্খাত করে সেনাবাহিনী
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়েছে এমন একজন হচ্ছেন মাইকেল মিউনিয়ারতিনি প্রায়ই টিভি টকশোতে মুরসিবিরোধী জোরালো বক্তব্য রাখেনতিনি আল হায়া পার্টিরও প্রধানসরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে তার এনজিও হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ফর ইজিপ্ট অ্যাসোসিয়েশনকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৩ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছেতিনি দেশটির খ্রিস্টানদের মুরসিবিরোধী আন্দোলনে সহায়তা করেছেন
মুরসিবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পাটির্র নেতা মোহাম্মদ এসমাত আল সাদাত শুধু ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে পেয়েছেন ৮৪,৪৪৫ ডলারএ সাদাত গত সোমবার মুরসি সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন
বিদেশি অর্থ সহায়তায় মিসরে অশান্তি সৃষ্টির জন্য গত মাসে ৪৩ জন বিদেশি এনজিও কর্মকর্তাকে কায়রোর একটি আদালত সাজা দিলে এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিসরে যে গণতন্ত্র চায় তার অর্থ হলো দেশটিতে তার প্রভাব বৃদ্ধিমানবাধিকার এবং সুশাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই
মিসরে সেনা অভ্যুত্থানে দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র্র কারও পক্ষ নেয়নি
তবে মার্কিন সরকারের বেশ কিছু নথিপত্রে দেখা গেছে, মিসরে মুরসিকে উত্খাতে জড়িত প্রধান বিরোধী জোটসহ বেশি কিছু রাজনীতিককেও বিপুল অর্থ সহায়তা দেয় ওবামা প্রশাসন
নথিপত্রে দেখা যায়, যেসব কর্মকর্তাকে অর্থ সহায়তা করা হয় তার মধ্যে আছেন একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তা যিনি সহিংস উপায়ে মুরসি সরকারকে উত্খাতে প্ররোচনা দেনআর একজন ইসলামবিরোধী রাজনীতিককেও অর্থ দেয়া হয়, যিনি প্রচারণা চালান যে মসজিদগুলো বন্ধ করে দিয়ে আলেমদের জোর করে বের করে দিতে হবেযুক্তরাষ্ট্র্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনভিত্তিক অনুষ্ঠান ইউসি বারকেলের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের উন্নয়নে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্টতহবিলের অধীনে এ অর্থসহায়তা দেয়া হয়
ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের অধীনে প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষাত্কার এবং সরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ অর্থসহায়তা পেয়ে আসছে মুরসিবিরোধী রাজনীতিক ও তাদের অনুগতরা
ওয়াশিংটনের এ অর্থ সহায়তা মিসরীয় আইনের লঙ্ঘনমিসরের আইনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিদেশি অর্থসহায়তা নেয়া নিষিদ্ধ
এমনকি এটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনেরও লঙ্ঘনদেশটির আইন অনুসারে বিদেশি রাজনীতিক, নাশতকামূলক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচিত সরকার বিরোধী কোনো কাজে জনগণের করের টাকা খরচ করা যায় না
মূলত আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থীদের উত্থান ঠেকাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষদের ফের ক্ষমতায় আনার জন্য ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্স তহবিলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এ অর্থ সহায়তা দেয়
ইসলামপন্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনি স্বার্থের বিরোধিতা করে থাকে
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজনীতিক বলেছেন, ওয়াশিংটন পরোক্ষাভাবে বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিয়েছে
মুরসি বিরোধী মিসরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান রাজনীতিক স্বাধীন ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের আমেরিকানরা বলেছে আমরা যদি সপ্তাহখানেক ধরে বড় ধরনের বিক্ষোভ করতে পারি তবে ওয়াশিংটন মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার সম্পর্কে তার বিদ্যমান নীতি পুনর্বিবেচনা করবে
যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রায়ণের জন্য যত অর্থ খরচ করেছে তার একটি বড় অংশ পেয়েছে কায়রোতে অবস্থিত ইব্রাহিমের ইবনে খালদুন সেন্টারমিসরের অন্যান্য রাজনীতিকরাও বলেছেন যে মুরসির বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনকে প্রকাশ্যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে জনমতকে ক্ষেপিয়ে তুলতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থসাহায্যপুষ্ট মিসরের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রেই নির্বাসিত, ওমর আফিফি সোলিমান একটি পরিকল্পনার কথা লিখেছেন এভাবে—‘রাস্তায় খেজুর গাছ ফেলে কায়রোমুখী বাসগুলো থামিয়ে দাও, রাস্তা ভিজিয়ে দাও গ্যাস আর ডিজেল দিয়েএ অবস্থায় বাসের গতি যখন কমে আসবে তখন আগুন জ্বালিয়ে দাও যাতে ভেতরের সব যাত্রী পুড়ে মারা যায়
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় একাধিক সংস্থার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থ সহায়তা করে থাকেজনগণের করের কোটি কোটি ডলার সরবরাহ করা হয় ব্যুরো অব ডেমোক্র্যাসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার, দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ, ইউএসএইড এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির মাধ্যমে
এসব সংগঠন আবার অন্য সংগঠনের মাধ্যমে মুরসিবিরোধী নেতাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছেএর মধ্যে আছে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট এবং ফ্রিডম হাউসযুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের নথিপত্রে দেখা যায়, বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওর নামে এসব সংগঠন মিসরে মুরসিবিরোধী অনেক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে
১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর বুশ প্রশাসন ২০০২ সালে দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ গড়ে তোলেএ সংগঠনটি মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের নামে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ কোটি ডলার খরচ করেছেইউএসএইড মধ্যপ্রাচ্যে বছরে খরচ করে ১৪০ কোটি ডলারএর মধ্যে গণতন্ত্রায়ণেরজন্য খরচ করা হয় ৩৯ কোটি ডলার
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরাসরি গণতন্ত্র প্রকল্পের জন্য কত অর্থ ব্যয় করে তার হিসাব প্রকাশ করে নাতবে ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রজেক্ট অন মিডল ইস্ট ডেমোক্র্যাসির নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন ম্যাকইনিমির হিসেবে, ২০১১ সালের এজন্য সাড়ে ৬ কোটি ডলার এবং ২০১২ সালে আড়াই কোটি ডলার ব্যয় করা হয়েছে
মিসরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থ সহায়তার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসি২০১১ সালের সংস্থাটির জন্য কংগ্রেসের বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারসংস্থাটি কর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের মিসরের একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তাকে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার অর্থ দিয়েছেতার কাজ হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে মিসরে সহিংসতায় উসকানি দেয়া
কর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের এই পুলিশ কর্মকর্তা মিসরের এলিট পুলিশি তদন্ত বাহিনীতে কর্মরত ছিলেনএ বাহিনীটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত ২০০৮ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছেনহোসনি মোবারক সরকার, তার বিদায়ের পর সেনা সরকার এবং সর্বশেষ মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছে সোলিমান
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ধার মর্যাদা পেয়েছেনতার অনুপস্থিতিতে তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে কায়রোর একটি আদালততাকে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির ফেলোশিপ দেয়া হয়েছেএর আওতায় তাকে ২০০৯ সালে ৫০ হাজার ডলার এবং ২০১০ সালে ৬০ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে
ইউসি বারকেলের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে তিনি অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেনতবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অর্থ যথেষ্ট নয়এদিকে, এনইডি তার ওয়েবসাইট থেকে মিসরে অর্থ সহায়তার হিসাব তুলে নিয়েছে
ফেসবুকের ৮৩ হাজার অনুসারী, ইউটিউব ও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি ব্রাদারহুড ও মুরসিবিরোধীদের ভয়ঙ্কর সহিংসতার পথ বাতলে দিতেনজুনে মুরসি বিরোধী আন্দোলনের সময় তার একটি নির্দেশনা ছিল এরকমপ্রথমেই হাঁটুর হাড় গুঁড়ো করে দিয়ে মুরসি সমর্থকদের অক্ষম করে দাও
পরে সেভাবেই মুরসি সমর্থকদের ওপর হামলা হয়মে মাসে সে তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষের প্রধানদের শিরশ্ছেদ করে
মিসরের মুরসিবিরোধী অনেক নেতাকেও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়এরা গায়ের জোরে মুরসিকে উত্খাতের পক্ষে প্রচারণা চালায়এদের মধ্যে মুরসিবিরোধী প্রধান জোট সালভেশন ফ্রন্টের নেতারাও রয়েছেএ জোটের প্রধান বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট নোবেলজয়ী আল বারাদেই
এদেরই একজন হলেন মুসলিমবিরোধী নেত্রী এরশা আবদেল ফাতাহতিনি জোর প্রচারণা চালান, মুরসি প্রবর্তিত সংবিধানের পক্ষে, যেখানে বলা হয়েছিল শরীয়াহ হবে মিসরের সংবিধানের উত্স, যেসব মসজিদ থেকে প্রচারণা চালানো হয়, সেসব মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে তার ইমামদের বের করে দিতে হবেসত্যি সত্যিই তার সমর্থকরা এই কাজ করে বসেএতে বাধা দেয়া হলে বেশ কয়েকজন মুরসি সমর্থককে হত্যা করা হয়
আবদেল ফাতাহর এনজিও দ্য ইজিপশিয়ান অ্যাকাডেমিকে ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৭৫ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়আবদেল ফাতাহ সালভেশন ফ্রন্টেরও নেত্রীএ দলের প্রধান এল বারাদিই কিছুদিন আগেই ঘোষণা করেন, ৩০ জুন হবে মুরসির শেষ দিনতার তিন দিন পর মুরসিকে উত্খাত করে সেনাবাহিনী
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়েছে এমন একজন হচ্ছেন মাইকেল মিউনিয়ারতিনি প্রায়ই টিভি টকশোতে মুরসিবিরোধী জোরালো বক্তব্য রাখেনতিনি আল হায়া পার্টিরও প্রধানসরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে তার এনজিও হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ফর ইজিপ্ট অ্যাসোসিয়েশনকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৩ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছেতিনি দেশটির খ্রিস্টানদের মুরসিবিরোধী আন্দোলনে সহায়তা করেছেন
মুরসিবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পাটির্র নেতা মোহাম্মদ এসমাত আল সাদাত শুধু ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে পেয়েছেন ৮৪,৪৪৫ ডলারএ সাদাত গত সোমবার মুরসি সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন
বিদেশি অর্থ সহায়তায় মিসরে অশান্তি সৃষ্টির জন্য গত মাসে ৪৩ জন বিদেশি এনজিও কর্মকর্তাকে কায়রোর একটি আদালত সাজা দিলে এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিসরে যে গণতন্ত্র চায় তার অর্থ হলো দেশটিতে তার প্রভাব বৃদ্ধিমানবাধিকার এবং সুশাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই
মিসরে সেনা অভ্যুত্থানে দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র্র কারও পক্ষ নেয়নিতবে মার্কিন সরকারের বেশ কিছু নথিপত্রে দেখা গেছে, মিসরে মুরসিকে উত্খাতে জড়িত প্রধান বিরোধী জোটসহ বেশি কিছু রাজনীতিককেও বিপুল অর্থ সহায়তা দেয় ওবামা প্রশাসননথিপত্রে দেখা যায়, যেসব কর্মকর্তাকে অর্থ সহায়তা করা হয় তার মধ্যে আছেন একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তা যিনি সহিংস উপায়ে মুরসি সরকারকে উত্খাতে প্ররোচনা দেনআর একজন ইসলামবিরোধী রাজনীতিককেও অর্থ দেয়া হয়, যিনি প্রচারণা চালান যে মসজিদগুলো বন্ধ করে দিয়ে আলেমদের জোর করে বের করে দিতে হবেযুক্তরাষ্ট্র্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনভিত্তিক অনুষ্ঠান ইউসি বারকেলের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের উন্নয়নে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্টতহবিলের অধীনে এ অর্থসহায়তা দেয়া হয়ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের অধীনে প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষাত্কার এবং সরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ অর্থসহায়তা পেয়ে আসছে মুরসিবিরোধী রাজনীতিক ও তাদের অনুগতরাওয়াশিংটনের এ অর্থ সহায়তা মিসরীয় আইনের লঙ্ঘনমিসরের আইনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিদেশি অর্থসহায়তা নেয়া নিষিদ্ধএমনকি এটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনেরও লঙ্ঘনদেশটির আইন অনুসারে বিদেশি রাজনীতিক, নাশতকামূলক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচিত সরকার বিরোধী কোনো কাজে জনগণের করের টাকা খরচ করা যায় নামূলত আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থীদের উত্থান ঠেকাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষদের ফের ক্ষমতায় আনার জন্য ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্স তহবিলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এ অর্থ সহায়তা দেয়ইসলামপন্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনি স্বার্থের বিরোধিতা করে থাকেযুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজনীতিক বলেছেন, ওয়াশিংটন পরোক্ষাভাবে বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিয়েছেমুরসি বিরোধী মিসরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান রাজনীতিক স্বাধীন ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের আমেরিকানরা বলেছে আমরা যদি সপ্তাহখানেক ধরে বড় ধরনের বিক্ষোভ করতে পারি তবে ওয়াশিংটন মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার সম্পর্কে তার বিদ্যমান নীতি পুনর্বিবেচনা করবেযুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রায়ণের জন্য যত অর্থ খরচ করেছে তার একটি বড় অংশ পেয়েছে কায়রোতে অবস্থিত ইব্রাহিমের ইবনে খালদুন সেন্টারমিসরের অন্যান্য রাজনীতিকরাও বলেছেন যে মুরসির বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনকে প্রকাশ্যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে জনমতকে ক্ষেপিয়ে তুলতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থসাহায্যপুষ্ট মিসরের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রেই নির্বাসিত, ওমর আফিফি সোলিমান একটি পরিকল্পনার কথা লিখেছেন এভাবে—‘রাস্তায় খেজুর গাছ ফেলে কায়রোমুখী বাসগুলো থামিয়ে দাও, রাস্তা ভিজিয়ে দাও গ্যাস আর ডিজেল দিয়েএ অবস্থায় বাসের গতি যখন কমে আসবে তখন আগুন জ্বালিয়ে দাও যাতে ভেতরের সব যাত্রী পুড়ে মারা যায়যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় একাধিক সংস্থার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থ সহায়তা করে থাকেজনগণের করের কোটি কোটি ডলার সরবরাহ করা হয় ব্যুরো অব ডেমোক্র্যাসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার, দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ, ইউএসএইড এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির মাধ্যমেএসব সংগঠন আবার অন্য সংগঠনের মাধ্যমে মুরসিবিরোধী নেতাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছেএর মধ্যে আছে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট এবং ফ্রিডম হাউসযুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের নথিপত্রে দেখা যায়, বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওর নামে এসব সংগঠন মিসরে মুরসিবিরোধী অনেক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর বুশ প্রশাসন ২০০২ সালে দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ গড়ে তোলেএ সংগঠনটি মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের নামে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ কোটি ডলার খরচ করেছেইউএসএইড মধ্যপ্রাচ্যে বছরে খরচ করে ১৪০ কোটি ডলারএর মধ্যে গণতন্ত্রায়ণেরজন্য খরচ করা হয় ৩৯ কোটি ডলারঅবশ্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরাসরি গণতন্ত্র প্রকল্পের জন্য কত অর্থ ব্যয় করে তার হিসাব প্রকাশ করে নাতবে ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রজেক্ট অন মিডল ইস্ট ডেমোক্র্যাসির নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন ম্যাকইনিমির হিসেবে, ২০১১ সালের এজন্য সাড়ে ৬ কোটি ডলার এবং ২০১২ সালে আড়াই কোটি ডলার ব্যয় করা হয়েছেমিসরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থ সহায়তার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসি২০১১ সালের সংস্থাটির জন্য কংগ্রেসের বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারসংস্থাটি কর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের মিসরের একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তাকে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার অর্থ দিয়েছেতার কাজ হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে মিসরে সহিংসতায় উসকানি দেয়াকর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের এই পুলিশ কর্মকর্তা মিসরের এলিট পুলিশি তদন্ত বাহিনীতে কর্মরত ছিলেনএ বাহিনীটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত ২০০৮ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছেনহোসনি মোবারক সরকার, তার বিদায়ের পর সেনা সরকার এবং সর্বশেষ মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছে সোলিমানতিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ধার মর্যাদা পেয়েছেনতার অনুপস্থিতিতে তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে কায়রোর একটি আদালততাকে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির ফেলোশিপ দেয়া হয়েছেএর আওতায় তাকে ২০০৯ সালে ৫০ হাজার ডলার এবং ২০১০ সালে ৬০ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছেইউসি বারকেলের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে তিনি অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেনতবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অর্থ যথেষ্ট নয়এদিকে, এনইডি তার ওয়েবসাইট থেকে মিসরে অর্থ সহায়তার হিসাব তুলে নিয়েছেফেসবুকের ৮৩ হাজার অনুসারী, ইউটিউব ও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি ব্রাদারহুড ও মুরসিবিরোধীদের ভয়ঙ্কর সহিংসতার পথ বাতলে দিতেনজুনে মুরসি বিরোধী আন্দোলনের সময় তার একটি নির্দেশনা ছিল এরকমপ্রথমেই হাঁটুর হাড় গুঁড়ো করে দিয়ে মুরসি সমর্থকদের অক্ষম করে দাওপরে সেভাবেই মুরসি সমর্থকদের ওপর হামলা হয়মে মাসে সে তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষের প্রধানদের শিরশ্ছেদ করেমিসরের মুরসিবিরোধী অনেক নেতাকেও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়এরা গায়ের জোরে মুরসিকে উত্খাতের পক্ষে প্রচারণা চালায়এদের মধ্যে মুরসিবিরোধী প্রধান জোট সালভেশন ফ্রন্টের নেতারাও রয়েছেএ জোটের প্রধান বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট নোবেলজয়ী আল বারাদেইএদেরই একজন হলেন মুসলিমবিরোধী নেত্রী এরশা আবদেল ফাতাহতিনি জোর প্রচারণা চালান, মুরসি প্রবর্তিত সংবিধানের পক্ষে, যেখানে বলা হয়েছিল শরীয়াহ হবে মিসরের সংবিধানের উত্স, যেসব মসজিদ থেকে প্রচারণা চালানো হয়, সেসব মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে তার ইমামদের বের করে দিতে হবেসত্যি সত্যিই তার সমর্থকরা এই কাজ করে বসেএতে বাধা দেয়া হলে বেশ কয়েকজন মুরসি সমর্থককে হত্যা করা হয়আবদেল ফাতাহর এনজিও দ্য ইজিপশিয়ান অ্যাকাডেমিকে ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৭৫ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়আবদেল ফাতাহ সালভেশন ফ্রন্টেরও নেত্রীএ দলের প্রধান এল বারাদিই কিছুদিন আগেই ঘোষণা করেন, ৩০ জুন হবে মুরসির শেষ দিনতার তিন দিন পর মুরসিকে উত্খাত করে সেনাবাহিনীযুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়েছে এমন একজন হচ্ছেন মাইকেল মিউনিয়ারতিনি প্রায়ই টিভি টকশোতে মুরসিবিরোধী জোরালো বক্তব্য রাখেনতিনি আল হায়া পার্টিরও প্রধানসরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে তার এনজিও হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ফর ইজিপ্ট অ্যাসোসিয়েশনকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৩ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছেতিনি দেশটির খ্রিস্টানদের মুরসিবিরোধী আন্দোলনে সহায়তা করেছেনমুরসিবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পাটির্র নেতা মোহাম্মদ এসমাত আল সাদাত শুধু ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে পেয়েছেন ৮৪,৪৪৫ ডলারএ সাদাত গত সোমবার মুরসি সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়েছেনবিদেশি অর্থ সহায়তায় মিসরে অশান্তি সৃষ্টির জন্য গত মাসে ৪৩ জন বিদেশি এনজিও কর্মকর্তাকে কায়রোর একটি আদালত সাজা দিলে এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘমধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিসরে যে গণতন্ত্র চায় তার অর্থ হলো দেশটিতে তার প্রভাব বৃদ্ধিমানবাধিকার এবং সুশাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই
মিসরে সেনা অভ্যুত্থানে দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র্র কারও পক্ষ নেয়নি
তবে মার্কিন সরকারের বেশ কিছু নথিপত্রে দেখা গেছে, মিসরে মুরসিকে উত্খাতে জড়িত প্রধান বিরোধী জোটসহ বেশি কিছু রাজনীতিককেও বিপুল অর্থ সহায়তা দেয় ওবামা প্রশাসন
নথিপত্রে দেখা যায়, যেসব কর্মকর্তাকে অর্থ সহায়তা করা হয় তার মধ্যে আছেন একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তা যিনি সহিংস উপায়ে মুরসি সরকারকে উত্খাতে প্ররোচনা দেনআর একজন ইসলামবিরোধী রাজনীতিককেও অর্থ দেয়া হয়, যিনি প্রচারণা চালান যে মসজিদগুলো বন্ধ করে দিয়ে আলেমদের জোর করে বের করে দিতে হবেযুক্তরাষ্ট্র্রের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনভিত্তিক অনুষ্ঠান ইউসি বারকেলের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের উন্নয়নে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্টতহবিলের অধীনে এ অর্থসহায়তা দেয়া হয়
ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের অধীনে প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষাত্কার এবং সরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ অর্থসহায়তা পেয়ে আসছে মুরসিবিরোধী রাজনীতিক ও তাদের অনুগতরা
ওয়াশিংটনের এ অর্থ সহায়তা মিসরীয় আইনের লঙ্ঘনমিসরের আইনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিদেশি অর্থসহায়তা নেয়া নিষিদ্ধ
এমনকি এটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনেরও লঙ্ঘনদেশটির আইন অনুসারে বিদেশি রাজনীতিক, নাশতকামূলক কর্মকাণ্ড এবং নির্বাচিত সরকার বিরোধী কোনো কাজে জনগণের করের টাকা খরচ করা যায় না
মূলত আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থীদের উত্থান ঠেকাতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষদের ফের ক্ষমতায় আনার জন্য ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্স তহবিলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র এ অর্থ সহায়তা দেয়
ইসলামপন্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনি স্বার্থের বিরোধিতা করে থাকে
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজনীতিক বলেছেন, ওয়াশিংটন পরোক্ষাভাবে বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিয়েছে
মুরসি বিরোধী মিসরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান রাজনীতিক স্বাধীন ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের আমেরিকানরা বলেছে আমরা যদি সপ্তাহখানেক ধরে বড় ধরনের বিক্ষোভ করতে পারি তবে ওয়াশিংটন মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার সম্পর্কে তার বিদ্যমান নীতি পুনর্বিবেচনা করবে
যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রায়ণের জন্য যত অর্থ খরচ করেছে তার একটি বড় অংশ পেয়েছে কায়রোতে অবস্থিত ইব্রাহিমের ইবনে খালদুন সেন্টারমিসরের অন্যান্য রাজনীতিকরাও বলেছেন যে মুরসির বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনকে প্রকাশ্যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে জনমতকে ক্ষেপিয়ে তুলতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থসাহায্যপুষ্ট মিসরের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রেই নির্বাসিত, ওমর আফিফি সোলিমান একটি পরিকল্পনার কথা লিখেছেন এভাবে—‘রাস্তায় খেজুর গাছ ফেলে কায়রোমুখী বাসগুলো থামিয়ে দাও, রাস্তা ভিজিয়ে দাও গ্যাস আর ডিজেল দিয়েএ অবস্থায় বাসের গতি যখন কমে আসবে তখন আগুন জ্বালিয়ে দাও যাতে ভেতরের সব যাত্রী পুড়ে মারা যায়
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডেমোক্র্যাসি অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় একাধিক সংস্থার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থ সহায়তা করে থাকেজনগণের করের কোটি কোটি ডলার সরবরাহ করা হয় ব্যুরো অব ডেমোক্র্যাসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লেবার, দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ, ইউএসএইড এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির মাধ্যমে
এসব সংগঠন আবার অন্য সংগঠনের মাধ্যমে মুরসিবিরোধী নেতাদের অর্থ সহায়তা দিয়েছেএর মধ্যে আছে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট এবং ফ্রিডম হাউসযুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের নথিপত্রে দেখা যায়, বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওর নামে এসব সংগঠন মিসরে মুরসিবিরোধী অনেক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে
১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর বুশ প্রশাসন ২০০২ সালে দ্য মিডল ইস্ট পার্টনারশিপ ইনিশিয়েটিভ গড়ে তোলেএ সংগঠনটি মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের নামে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ কোটি ডলার খরচ করেছেইউএসএইড মধ্যপ্রাচ্যে বছরে খরচ করে ১৪০ কোটি ডলারএর মধ্যে গণতন্ত্রায়ণেরজন্য খরচ করা হয় ৩৯ কোটি ডলার
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরাসরি গণতন্ত্র প্রকল্পের জন্য কত অর্থ ব্যয় করে তার হিসাব প্রকাশ করে নাতবে ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রজেক্ট অন মিডল ইস্ট ডেমোক্র্যাসির নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন ম্যাকইনিমির হিসেবে, ২০১১ সালের এজন্য সাড়ে ৬ কোটি ডলার এবং ২০১২ সালে আড়াই কোটি ডলার ব্যয় করা হয়েছে
মিসরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থ সহায়তার প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসি২০১১ সালের সংস্থাটির জন্য কংগ্রেসের বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারসংস্থাটি কর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের মিসরের একজন নির্বাসিত পুলিশ কর্মকর্তাকে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার অর্থ দিয়েছেতার কাজ হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে মিসরে সহিংসতায় উসকানি দেয়া
কর্নেল ওমর আফিফি সোলিমান নামের এই পুলিশ কর্মকর্তা মিসরের এলিট পুলিশি তদন্ত বাহিনীতে কর্মরত ছিলেনএ বাহিনীটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কুখ্যাত ২০০৮ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়ে আসছেনহোসনি মোবারক সরকার, তার বিদায়ের পর সেনা সরকার এবং সর্বশেষ মুরসি সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছে সোলিমান
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ধার মর্যাদা পেয়েছেনতার অনুপস্থিতিতে তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে কায়রোর একটি আদালততাকে ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির ফেলোশিপ দেয়া হয়েছেএর আওতায় তাকে ২০০৯ সালে ৫০ হাজার ডলার এবং ২০১০ সালে ৬০ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে
ইউসি বারকেলের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে তিনি অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করেনতবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অর্থ যথেষ্ট নয়এদিকে, এনইডি তার ওয়েবসাইট থেকে মিসরে অর্থ সহায়তার হিসাব তুলে নিয়েছে
ফেসবুকের ৮৩ হাজার অনুসারী, ইউটিউব ও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি ব্রাদারহুড ও মুরসিবিরোধীদের ভয়ঙ্কর সহিংসতার পথ বাতলে দিতেনজুনে মুরসি বিরোধী আন্দোলনের সময় তার একটি নির্দেশনা ছিল এরকমপ্রথমেই হাঁটুর হাড় গুঁড়ো করে দিয়ে মুরসি সমর্থকদের অক্ষম করে দাও
পরে সেভাবেই মুরসি সমর্থকদের ওপর হামলা হয়মে মাসে সে তার অনুসারীদের নির্দেশ দেয়, তারা যেন বিদ্যুত্, গ্যাস ও পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষের প্রধানদের শিরশ্ছেদ করে
মিসরের মুরসিবিরোধী অনেক নেতাকেও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়এরা গায়ের জোরে মুরসিকে উত্খাতের পক্ষে প্রচারণা চালায়এদের মধ্যে মুরসিবিরোধী প্রধান জোট সালভেশন ফ্রন্টের নেতারাও রয়েছেএ জোটের প্রধান বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট নোবেলজয়ী আল বারাদেই
এদেরই একজন হলেন মুসলিমবিরোধী নেত্রী এরশা আবদেল ফাতাহতিনি জোর প্রচারণা চালান, মুরসি প্রবর্তিত সংবিধানের পক্ষে, যেখানে বলা হয়েছিল শরীয়াহ হবে মিসরের সংবিধানের উত্স, যেসব মসজিদ থেকে প্রচারণা চালানো হয়, সেসব মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে তার ইমামদের বের করে দিতে হবেসত্যি সত্যিই তার সমর্থকরা এই কাজ করে বসেএতে বাধা দেয়া হলে বেশ কয়েকজন মুরসি সমর্থককে হত্যা করা হয়
আবদেল ফাতাহর এনজিও দ্য ইজিপশিয়ান অ্যাকাডেমিকে ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৭৫ হাজার ডলার অর্থ সহায়তা দেয়আবদেল ফাতাহ সালভেশন ফ্রন্টেরও নেত্রীএ দলের প্রধান এল বারাদিই কিছুদিন আগেই ঘোষণা করেন, ৩০ জুন হবে মুরসির শেষ দিনতার তিন দিন পর মুরসিকে উত্খাত করে সেনাবাহিনী
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়েছে এমন একজন হচ্ছেন মাইকেল মিউনিয়ারতিনি প্রায়ই টিভি টকশোতে মুরসিবিরোধী জোরালো বক্তব্য রাখেনতিনি আল হায়া পার্টিরও প্রধানসরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে তার এনজিও হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ফর ইজিপ্ট অ্যাসোসিয়েশনকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৩ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছেতিনি দেশটির খ্রিস্টানদের মুরসিবিরোধী আন্দোলনে সহায়তা করেছেন
মুরসিবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পাটির্র নেতা মোহাম্মদ এসমাত আল সাদাত শুধু ২০১১ সালেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে পেয়েছেন ৮৪,৪৪৫ ডলারএ সাদাত গত সোমবার মুরসি সমর্থকদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন
বিদেশি অর্থ সহায়তায় মিসরে অশান্তি সৃষ্টির জন্য গত মাসে ৪৩ জন বিদেশি এনজিও কর্মকর্তাকে কায়রোর একটি আদালত সাজা দিলে এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিসরে যে গণতন্ত্র চায় তার অর্থ হলো দেশটিতে তার প্রভাব বৃদ্ধিমানবাধিকার এবং সুশাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই


মধ্যপ্রাচ্যে রোজা শুরু বুধবার

No comments: