Monday, July 8, 2013

শাহপরাণস্থ হোটেল পর্যটক নিবাসে অনৈকিত কর্মকান্ড অব্যাহত

ম্যানেজার হালিমার খুঁটির জোর কোথায় ?
সিলেট ডেস্কঃ সিলেট জুড়ে বাড়ছে এইডসের মতো মরণ ঘাতক ব্যাধি। যা ইতিপূর্বে সংবাদপত্রসমূহের একাধিক জরিপে উঠে এসেছে। এ মরণব্যাধির সংক্রামক কেন্দ্রস্থল হচ্ছে সিলেট নগরীসহ শহরতলি এলাকার আবাসিক হোটেলগুলো। আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আবাসিক হোটেলের আদলে গড়ে তুলা হয়েছে অসামাজিক কার্যকলাপের অভয়াশ্রম। অনৈতিক কর্মকান্ডের এমনই একটি কারখানা হচ্ছে শাহপরাণ এলাকায় অবস্থিত হোটেল পর্যটক নিবাস গেস্ট হাউস। আর এ গেস্ট হাউসের ম্যানেজার হালিমা হচ্ছেন সকল অপরাধের খলনায়িকা। তবে বেপরোয়া এ খলনায়িকার খুঁটির জোর কোথায় ? এমন প্রশ্ন সিলেটবাসী সুশীল সমাজের।
গত ২০ জুন দৈনিক সিলেট সংলাপ, ২৩ জুন সাপ্তাহিক সিলেট প্রান্ত ও ২৪ জুন জাতীয় দৈনিক প্রথমভোরসহ একাধিক স্থানীয় পত্রিকায় এ বিষয়ক একটি সংবাদ প্রকাশ পায়। এরই জের ধরে পর্যটক নিবাস হোটেলের ম্যানেজার হালিমা বেগম স্থানীয় একাধিক পতিতার দালালদের প্ররোচনায় তার গেস্ট হাউসের ব্যাপারে সংবাদ সংগ্রহকারী সাংবাদিকদের মোবাইল নাম্বারে কয়েকটি অপরিচিত মোবাইল নাম্বার থেকে অনেকবার হুমকি প্রদান করেন। এমনকি তার গেস্ট হাউসে ‘হামলা’ হয়েছে মর্মে শাহপরাণ থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন। এদিকে, অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, গত ৫ জুন শাহপরান তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্য এস.আই. মাসুদ দাসপাড়া মামার দোকান নামক স্থান থেকে দুইজন দালালসহ তিনজন নীশিবালাকে আটক করে।
পরে এদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। জানা গেছে, শহরতলির শাহপরাণ এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন হোটেলের পতিতাদের নিয়ন্ত্রণ করেন এই হোটেল পর্যটক নিবাসের হর্তাকর্তা হালিমা বেগম। তার বিরুদ্ধে শাহপরাণ এলাকাবাসীর বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- হোটেল পর্যটক নিবাসের মালিক হোসেইন খানের সঙ্গে পরকীয়ার মাধ্যমে তিনি এ গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক হয়েছেন। এমনকি তার কারণে হোসেইন খান তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য হয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৮ জুন মঙ্গলবার সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট-তামাবিল সড়কের ডান পার্শ্বে, শহরতলির সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের টিক বিপরীতে খাদিমনগর এলাকায় বিশ্বখ্যাত আউলিয়া হযরত শাহপরান (র.)-এর মাজারের অদুর পূন্যভূমিতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী হোসাইন খান নিজস্ব ভূমিতে চার তলা  কমপ্লেক্সে আবাসিক হোটেল ব্যবসার আড়ালে চালাচ্ছেন বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ। সাইনবোর্ডে একটি নির্ভরযোগ্য আবাসিক হোটেল’ স্লোগান থাকলেও আসলে এটি কোনো আবাসিক হোটেলই নয়। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আবাসিক হোটেলের আড়ালে দিন-রাত বসান মদ, জুয়া ও সুন্দরী নারীদের আড্ডা। হোসাইন খান প্রায় সময় যুক্তরাজ্য অবস্থানকালীন তার এ অপকর্মের ব্যবসা পরিচালনা করেন হালিমা বেগম নামক কৃঞ্চবর্ণ এক মহিলা। যার কার্যকলাপে এলাকবাসী ফুঁসে উঠেছেন।  হালিমার সঙ্গে আছেন করিমা বেগম রিমা নামক অল্পবয়সি এক সুন্দরী। ‘হোটেল পর্যটক নিবাস’-এ বিষয়ে খুঁজ নিতে গিয়ে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসাইন খানকে পাওয়া যায়নি। তবে হোসাইন খান ও হালিমা বেগমের দীর্ঘদিনের সহচর হোটেল সহকারী সিলেটের জকিগঞ্জের সুনিল বিশ্বাসের ছেলে হিমাংশু বিশ্বাস (২৭) বলেন, পরিচালক হোসাইন খান যুক্তরাজ্য যাওয়ার উদ্দ্যেশে এখন সস্ত্রীক ঢাকায় অবস্থান করছেন। এদিকে সাংবাদিকদের আসার খবর পেয়েই হোটেলের প্রধান ম্যানেজার এবং হোসাইন খানের সব অপকর্মের মূল হোতা হালিমা বেগম পালিয়ে যান। তার অনুপস্থিতিতে সহকারী ম্যানেজার করিমা বেগম রিমা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ব্যাপক অস্বস্থি এবং বিব্রতবোধ করেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আবাসিক হোটেলের যাবতীয় নিয়মাবলী ব্যতিরেখে ওই হোটেলে বোর্ডার রাখা হয়। হোটেলের নোটিশ বোর্ডে বোর্ডারের জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট সাইজ ছবি প্রদানের নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে তা কখনো রাখা হয় না। হোটেল কোড অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ক্যামেরা দ্বারা বোর্ডারদের ছবি তুলে রাখার কথা থাকলেও তা করা হয় না। হোটেল রেজিস্ট্রার খাতা অনুসন্ধান করে দেখা যায়, কোনো বোর্ডারেরই সঠিক কোনো তথ্যাদি সংগৃহীত নেই। এসব অনিয়মের ব্যাপারে সহকারী ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, আমি এখানে নতুন। শুনেছি আগামী মাস থেকে সবকিছু নিয়মনীতি মতো চলবে। এ ব্যাপারে হালিমা বেগমের সাথে ফোনে আলাপ করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনাদের কোনো অভিযোগ থাকলে হোটেল ডায়রিতে লিখে যান। আমি পরবর্তীতে দেখব। সকল অনিয়মের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের হোটেলে সবকিছুই নিয়মমতো চলছে। শাহপরান (রহ.) থানা এবং উপজেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের সন্তুষেই ‘হোটেল পর্যটক নিবাস’-এর সকল কার্যক্রম চলছে। এ বিষয়ে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার জানান, তিনি পুলিশের ডিবি থেকে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত। এ হোটেলের অপকর্মের বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সকল অপকর্ম প্রতিহত করতে দৃঢ় সচেষ্ট থাকবে প্রশাসন। এদিকে ‘হোটেল পর্যটক নিবাস’-এর সরজমিনে পরিদর্শনের কিছুক্ষন পর স্থানিয় সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের বিষয়ে হুমকি প্রদান করা হয়। হোটেলের ছবি তোলা এবং তথ্য সংগ্রহকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জগলু ওরফে পিচ্চি জগলু বলেন, পত্রিকায় এসব ছাপালে দেখে নেব। জানাযায়, জগলু ওরফে পিচ্চি জগলু ইতিপূর্বে একটি কিশোরীর পর্ণ ছবি ইন্টারনেটে ছাড়ার অপরাধে কারাভোগ করেন এবং কারামুক্ত হয়ে সে হোটেল পর্যটক নিবাসের ম্যনেজার হালিমার যোগসাজসে পতিতা ব্যবসা শুরু করে। এ বিষয়ে শাহপরান থানা পুলিশকে কয়েকবার মৌখিকভাবে অবগত করা হয়েছে। তবে প্রশাসন কেন এ গেস্ট হাউসের ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করছে এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। এ ব্যাপারে শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হুসেন জানান, জি.ডি টি তদন্তধিন।

No comments: