...এর আগে ২৭টি ‘কিলিং মিশনে’ অংশ নেয় তারেক
ওসমানিনগর বার্তা ডেস্কঃ পেশাদার কিলার তারেক। এর আগেও ২৭টি ‘কিলিং মিশনে’
অংশ
নিয়েছেন তিনি। যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তারেকের ২৮ নম্বর ‘কিলিং
মিশন’।
‘লাইভ হত্যাকাণ্ড’ ঘটনার নায়ক তারেক এখন টক অব দ্যা
সিটি। নৃশংসভাবে যুবলীগ
নেতা মিল্কিকে হত্যা করে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’
নিজেই
নিহত হন। র্যাব সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক কিসমত হায়াৎ জানান, তারেক
একজন পেশাদার ‘কিলার’। সে টাকার বিনিময় অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। যদিও যুবলীগ নেতা মিল্কীকে তারেক দলীয়
কোন্দলের কারণেই খুন করেন। তারেক
এর আগে ২৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। মিল্কি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তার ২৮ নম্বর ‘কিলিং
মিশন’।
কিসমত মিল্কি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এ
এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি। পড়ে
যান মিল্কি। বাঁচার জন্য
সামনে দৌড়ানোর চেষ্টা। আবারও
গুলি। ফের উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা। যমদূতের হাতে থাকা পিস্তল থেকে আবারও বেরিয়ে আসে গুলি। নিস্তেজ
হয়ে পড়েন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল
হক খান মিল্কি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিল্কি
হত্যাকা্ণ্ডের আসল নায়ক তারেক মিল্কিরই দলীয় সহকর্মী
ও বন্ধু। ছোট বেলা
থেকেই তারা এক সঙ্গে বেড়ে উঠেন। মিল্কি
যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিরক সম্পাদক
আর জাহিদ সিদ্দিকী তারেক একই কমিটির যুগ্ম
সাধারণ সম্পাদক। মৃত্যুর বেশ
আগে মিল্কি র্যাব ও পুলিশের কাছে অভিযোগ
করেছিলেন, তাকে হত্যা করা হতে পারে। মিল্কির সে আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত
সত্যি হলো।
মিল্কির পারিবারিক সূত্র জানায়, সন্তানদের
পোশাক বদল করতে সোমবার ইফতার শেষে
মোহাম্মদপুর স্যার সৈয়দ রোডের ৬/৬ নম্বরের বাসা থেকে শপার্ড ওয়ার্ল্ডের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে মিল্কি বের হয়েছিলেন। এ সময় গুলশানে তিনি পরিচিতদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা দেন। সাগর নামের একজনের প্রাইভেট কারে চড়ে তিনি
সেখানে গিয়েছিলেন।
ঘাতক তারেক মিল্কির ছোটবেলার বন্ধু এবং যুবলীগ দক্ষিণের নেতা। রাজনৈতিক কলহ,
আধিপত্য
বিস্তার এবং ব্যক্তিগত আক্রোশে মিল্কিকে হত্যা করা হয়েছে।
র্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট জানায়, মতিঝিল
এলাকায় সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর
পদপ্রার্থী নিয়ে তারেক ও মিল্কীর মধ্যে দ্বন্দ্বের তথ্য পেয়েছে। এ এলাকায়
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি ও এলাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দু’জনের
মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। মতিঝিল
এজিবি কলোনিতে মিল্কীর হাত ধরেই তারেকের রাজনীতিতে প্রবেশ। কিন্তু সম্প্রতি
যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি গঠন নিয়ে দু’টি গ্রুপের
সৃষ্টি হয়। বর্তমান সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট গ্রুপের লোকজন কমিটিতে
বেশি স্থান পায়। সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম আরিফের গ্রুপের সবচেয়ে কম লোকজন
স্থান পায়। এ নিয়ে সম্রাট ও আরিফ গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ
করে। মিল্কী
কমিটিতে সাংগাঠনিক সম্পাদক এবং তারেক কার্যকরী সদস্য পদ পান।
সম্প্রতি কারাগারে আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে বাড্ডার
জাহাঙ্গীর-আলমগীরের মাধ্যমে
মিল্কী রাজনৈতিক আশ্রয় দিচ্ছিল। কারাগারে
আটক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার
আব্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তারেকের। তারেক
যুবলীগ উত্তরের নেতা চঞ্চল
গ্রুপের সঙ্গে এক হয়ে আরেকটি গ্রুপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, মতিঝিল থানা
আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রুপের সুদৃষ্টিতে পড়ে তারেক। এ নিয়ে মতিঝিল কেন্দ্রিক
বিভিন্ন অফিসের টেন্ডার বিশেষ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টেন্ডার ও সিএমএমইউ (কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট অব মেডিক্যাল ইউনিট) টেন্ডার
নিয়ে তারেক ও মিল্কীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম
আকার ধারণ করে।
অন্যদিকে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড
কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য আওয়ামী
লীগের পক্ষ থেকে মিল্কী নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা দেন। এসব নিয়ে দুই গ্রুপের
মধ্যে বৈরিতা ওঠে চরমে।
এক সময়ে দু’জনেই ছিলেন মতিঝিলের এজিবি কলোনির
বাসিন্দা। সেখানেই
তাদের বেড়ে ওঠা। রিয়াজুল হক খান মিল্কির পিতা ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাকটিশনার। তারেকের পিতা
ছিলেন রাজস্ব বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। প্রায় একই সময়ে তারেক ও
মিল্কি শামিল হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে, নাম লেখান
যুবলীগে। এক
সময়ে ঘনিষ্ঠ থাকলেও গত কয়েক বছর তারা একজন আরেকজনের শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হন। মতিঝিলকেন্দ্রিক
ব্যবসা, টেন্ডার বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের
ব্যবসায়িক কারণে বিরোধ বাধে। এক
সময়ে দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠা
মিল্কি ও তারেক বর্তমান সরকার আমলে অগাধ বিত্তের মালিক বনে যান। দুই জনই
মতিঝিল এলাকার কমিশনার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে দিনে দিনে তাদের
মধ্যে বিরোধ আরও বাড়তে থাকে। কয়েক
বছর আগে তারেক এজিবি কলোনি ছেড়ে চলে যান
ইস্কাটনে। মিল্কি চলে
যান মোহাম্মদপুরে। কিন্তু তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং রাজনীতির কেন্দ্র মতিঝিলেই থেকে যায়। একটি সূত্র জানিয়েছে, মাস চারেক আগেই
মতিঝিল এলাকার একটি টেন্ডারকে কেন্দ্র করে
চরম বিরোধ বাধে তাদের মধ্যে। দু’জনই
তাদের গ্রুপ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেন।
গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, শপার্স
ওয়ার্ল্ডের সামনের হত্যাকাণ্ডের
ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই মেজর রাশিদুল হক খান বাদি হয়ে ১১জনকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে একটি মামলা করেছেন।
এজাহারে জাহিদ সিদ্দিকী তারেককে প্রধান আসামি করে মোট ১১ জনের
নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজনকে আসামি করেছেন বাদি।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারেক ও তার এক সহযোগী র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এছাড়া বাকি ছয় জনকে আদালতে হাজির করে সাত
দিনের রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ।
No comments:
Post a Comment