বিসিএসে কোটাবিরোধী
আন্দোলনকারী ঢাবি ছাত্রদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলা : শাহবাগ ক্যাম্পাস
রণক্ষেত্র : সংঘর্ষ টিয়ার গ্যাস সড়ক অবরোধ : আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
সিলেট ডেস্ক:পুলিশ ও ছাত্রলীগের রণপ্রস্তুতির মধ্যেই
কোটাবিরোধী আন্দোলনে গতকাল অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দেশের শীর্ষ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিসিএসসহ সব চাকরিতে কোটা
প্রথা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের ওপর
সশস্ত্র তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ। দফায় দফায় এদের যৌথ হামলায়
রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।এ সময় গুলিবিদ্ধ হয় আন্দোলনরত চার শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের সাড়াশি
হামলা ও পুলিশের টিয়ারশেল ও কাঁদানে গ্যাসে আহত হয় অর্ধশতাধিক
শিক্ষার্থী। আটক করা হয় ২০ জন আন্দোলনকারীকে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে
প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন ও প্রক্টোরের
কার্যালয়ে হামলা করে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে,
এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে এ শাহবাগ মোড় দুই
মাসেরও বেশি সময় অচল করে রাখে কথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা, যাদের অনেকেই
ইসলামবিরোধী ভূমিকার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। তখন পুলিশ ও র্যাব তাদের চার স্তরের
নিরাপত্তা দেয় এবং ছাত্রলীগও সার্বক্ষণিক সহায়তা করে। কিন্তু একটি
বৈষম্যমূলক আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে এবার ঠিক উল্টো আচরণ করল তারা।এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কোটাবিরোধী আন্দোলনে
উত্তাল হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, খুলনা, সিলেট, বেগম রোকেয়া ও
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। তারা আন্দোলন
চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,
৩৪তম বিসিএসসহ সব ধরনের সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের
দাবিতে পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বেলা এগারোটার
দিকে শাহবাগে জড়ো হয় চাকরিপ্রার্থীরা। তবে তার আগেই সাঁজোয়া যান ও ট্যাঙ্ককসহ
রণপ্রস্তুতি নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেয় পুলিশ।বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের কাছে
রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনের সুযোগ চাইলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে তাদের
ধাওয়া দেয়। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আন্দোলনকারীরা কয়েকটি অংশে বিভক্ত
হয়ে যায়। একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসের দিকে ছুটে যায়। অন্য একটি পাবলিক লাইব্রেরী ও কাঁটাবনের দিকে সরে যায়। পুলিশ ৯ শিক্ষার্থীকে
আটক করে।এদিকে যে অংশটি বিশ্ববিদ্যালয়েলর দিকে ছুটে যায় ওই অংশকে
লক্ষ্যে করে টিয়ারশেল ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় তারা চারুকলা
অনুষদের সামনে এসে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্যে করে ইট-পাথর ছুড়ে মারে। পরীক্ষার্থীরা এ সময় দুটি গাড়ি ভাংচুর করেন। বেলা সাড়ে ১১টার
দিকে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা কাঁদানের গ্যাসের তীব্রতা থেকে বাঁচতে চারুকলা
অনুষদের ভেতরে থাকা শোভাযাত্রার ব্যবহৃত ‘মোটিফ’ টেনে রাস্তায় নিয়ে আসেন। তারা চারুকলার সামনে আগুন জ্বেলে
বিক্ষোভ করেন।পুলিশ অতিরিক্ত সদস্য নিয়ে ওই অংশকে ধাওয়া দিয়ে চারুকলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের
মসজিদ গেটে নিয়ে আসে। এ সময় শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মসজিদ গেট ও
সম্মুখ দিক থেকে ইট পাটকের ছুড়তে থাকলে পুলিশ পিছু হটে। এ সময় পুলিশের অনবরত গগনবিদারি টিয়ারশেল ও তীব্র কাঁদানে
গ্যাসে পুরো এলাকায় বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চলতে থাকে কয়েক দফা
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।এরপর দুপুর সোয়া ১২টায় ট্যাঙ্ক নিয়ে এগিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ ট্যাঙ্ক থেকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ও মসজিদের সামনে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কাঁদানের গ্যাসের
তীব্রতায় দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে শিক্ষার্থীরা। লাইব্রেরি ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি
থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। মিছিল নিয়ে তারা নীলক্ষেতের দিকে যায়। এ সময় পুলিশ তাদের
ধাওয়া দেয়। শিক্ষার্থীরা এফ রহমান হলে আশ্রয় নিলে পুলিশ তাদের হলে
ঢুকে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে এবং টিয়ারসেল ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে আহত
হয় এনামুল, সৃজন, আনোয়ার ও জহির।বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের
পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও ভিসির বাসভবনের হামলা করে। এ সময় প্রক্টর
পালিয়ে যান। প্রক্টরকে না
পেয়ে শিক্ষার্থীরা তার অফিসের দেয়ালিকার গ্লাস ভাংচুর করে।অন্যদিকে ভিসির বাসভবনের ঢুকে শিক্ষার্থীরা ভিসির বাড়ির ১০ থেকে
১৫টি ফুলের টব ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারসেল
ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলনকারীদের মধ্য
থেকে আটজনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষার্থীদের ওপর
হামলা কেন, জবাব চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন
আন্দোলনকারীরা। তারা দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজিচালিত একটি
অটোরিকশা ভাংচুর করেন।
No comments:
Post a Comment