Saturday, July 6, 2013

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক সিলেটের জৈন্তার রাজবাড়ি


সিলেট ডেস্কঃ বাংলাদেশের মধ্যে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জৈন্তাপুর উপজেলাবাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা যখন বৃটিশ শাসনে অন্তভুক্ত ছিল তখন একমাত্র জৈন্তাপুর উপজেলা ছিল স্বাধীন রাজ্যসেই প্রচীনকাল থেকেই এই উপজেলার মানুষের বসবাস ছিল১৫০০-১৮০০ সাল পর্যন্ত একমাত্র খাসিয়া রাজারই শাসন করেছেন জৈন্তাপুর রাজ্যকেপ্রথমেই তারা রাজ্য শাসন করতে শুরু করেন পাহাড় থেকে পর্বত, পর্বত খেকে রাজ্য এভাবেই পরিচালনা করেন১৬৮০ সালে রাজা লক্ষী নারায়ন জৈন্তাপুর রাজ্যর রাজধানী স্থাপন করেন উপজেলার নিজপাট এলাকায়তারপর দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করা হয় খাসিয়ার নথিয়াংপুঞ্জিতেসিংহের পূতিমূর্তি জৈন্তার রাজ্যর প্রতিক হিসেবে ব্যবহত হতোসমতল জৈন্তা রাজ্যের নগরীতে একমাত্র খাসিয়া রাজরাই অবস্থান করছিলজৈন্তার রাজ্যর উত্তর পশ্চিম দিকে নযাগাং, পূর্বে  নাগরতিছড়া এবং দক্ষিনে বড়গাং প্রবাহিত হয়ে ঘিরে রেখেছে জৈন্তার নগরীকেসুগভীর পরিখাবেষ্টিত এই নদীগুলো বর্তমান ধীরে ধীরে ক্রমশভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং জঙ্গলময় অবস্থায় পড়ে রযেছে১৭৯০ সালে তৎকালিন রাজা রাম সিংহের শাসনামলে জৈন্তাপুর রাজ্যর বিভিন্ন স্থানে বহু মসজিদ, মন্দির, গীর্জা নির্মান করা হয়েছিলজৈন্তাপুর রাজ্য তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন পাড়ায় বিভক্ত ছিল, বর্তমানেও রয়েছেজৈন্তারাজ্যর চারদিকে বিভিন্ন পরিখা খনন করে সুরক্ষিতভাবে ভেতরে খননকৃত কৃপ, নরবলি দেয়ার স্থান, বিচারালয় সহ আরো অনেক বড় বড় মূল্যবান পাথর রাখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিলতৎকালিন রাজা রামসিংহের শাসনামলে স্থাপিত পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে জৈন্তাপুর উপজেলার সারিঘাট এলাকার অবসি'ত ঐতিহাসিক ঢুপির মটের টিলা ছিল অন্যতমকিন্তু তৎকালীন রামসিংহ ধর্ম বিষয়ে প্রচার করতে বিশেষ উৎসাহী ছিলেনতার অসাধারণ প্রচেষ্টায় ১৭৭৮ সালে ঢুপি পাহাড়ের একটি লৈশখন্ডের উপর সুচারু শিল্পশোভিত সুউচ্চ শিব মন্দির স্থাপন করা হয়শিব মন্দিরটি ১০ থেকে ১২কিলোমিটার দূর হতে দেখা যায়১৮৯৭ সাল ভারতের আসাম অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হলে শিব মন্দিরের চূড়াটি ভেঙ্গে যায়এখনো মন্দিরটির ভগ্নাংশ রয়েছে
জৈন্তা রাজ্যর সারিঘাট এলাকার ঢুপির মঠের পাহাড়ে রামসিংহের খননকৃত পুকুর এবং প্রান্তশালাও বিদ্যমান অবস্থায় পড়ে রয়েছে১৮৩৫ সালে হ্যারি সাহেব নামক এক ইংরেজ ব্যক্তি চুনাপাথর ব্যবসায়ী জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাজেন্দ্র সিংহকে বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করে বিনা যুদ্ধে তাকে বন্দি করেনএই দিন জৈন্তারাজ্যের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়কিন্তু এই জৈন্তাপুর রাজ্যে থেকে বৃটিশরা অনেক মূল্যবান সম্পদ লুট করে নিয়ে চলে যায়জৈন্তাপুর  প্রচীন নিদর্শন রাজবাড়ি, রাজপ্রসাদ, রামসিংহের শাসনামলের সময় অনেক মুল্যবান পুরাকীর্তি ও তৎকালীন জৈন্তা রাজ্যর নানা স্থাপনা, মেঘাতিলক, কালাপাথর ও বিজয় সিংহ মহানাজার স্মৃতি মন্দির সহ জৈন্তা রাজ্যের পুরাতন নিদর্শনগুলো এখন রয়েছেতবে আজ এসব জিনিস সংরক্ষণে অবাব থাকায় জৈন্তা রাজ্যের স্মৃতি আস্তে আস্তে বিলিন হয়ে যাচ্ছেপুরাকীর্তিগুলো দেখার জন্য প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু পর্যটক এখানে এসে পাড়ি জমায়সিলেট তামাবিল সড়ক পথের মাঝখানে এবং সারিঘাট এলাকায় অবস্থিত এসব ঐতিহাসিক পাস্থশালা দেখে পর্যটকদের মনে খুবই আনন্দ জাগেজাফলং যাওয়ার পথে কেউ কেউ এই পাস্থশালা দেখার জন্য গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করে পরিদর্শন করেনজৈন্তার এই রাজবাড়ি ইতিহাসের জন্য জৈন্তাবাসী গর্বিত এবং সিলেট বিভাগের মানুষও গর্ববোধ করেনএই ঐতিহাসিক বিষয়টি প্রতি প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় অস্নান হয়ে থাকবে চিরদিন

No comments: